ফ্রিদম্যানের মহাবিস্ফোরণের তত্ত্ব - Prodipto Delwar

Unordered List

ads

Hot

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ফ্রিদম্যানের মহাবিস্ফোরণের তত্ত্ব


আমরা জানি মহাবিশ্ব সর্বদা সম্প্রসারণ হচ্ছে কিন্তু আগে এমনটা ভাবা হতো না ।১৯১৫ সালে বিজ্ঞান রাজ আইনস্টাইন যখন তার সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি সুত্রাকারে প্রকাশ করলেন তখনো আইনস্টাইন সহ বিজ্ঞানীদের সবাই স্থির মহাবিশ্বের উপর অটল বিশ্বাস নিয়ে স্থির আছেন ।তখন সর্বপ্রথম বারের মত ফ্রিদম্যান নামক রুশ বিজ্ঞানী স্থির মহাবিশ্ব চিন্তার বাইরে গিয়ে তিনি দেখালেন এই মহাবিশ্বকে স্থির হিসাবে চিন্তা করা
উচিৎ নয় ।এই মহাবিশ্ব সবসময় চারিদিকে সম্প্রসারণশীল ।ফ্রিদম্যান তখন দুইটি যুগান্ততরী অনুমান করলেন যা আধুনিক বিগ-ব্যাঙ তত্ত্বের ধারক বলে মনে করা হয়,ধারণা দুইটি হলোঃ

১। আমরা মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকাই না কেন সবদিকেই একই রকম দেখাবে
২।আর মহাবিশ্বের যে কোন জায়গার জন্য এই কথা সত্য হবে
তার মানে ফ্রিদম্যান একটি অসীম মহাবিশ্বের চিন্তা করলেন,যা সৃষ্টি থেকেই চতুর্দিকে সম্প্রসারণশীল;কিন্তু এর আগে ধারণা করা হত আমাদের এই মহাবিশ্ব অসীম সীমানা নিয়ে স্থির অবস্থায় বিদ্যমান,আইনস্টাইন নিজেও তার প্রাথ্যমিক জীবনে এমনটাই বিশ্বাস করতো,পরে অক্যট্য যুক্তি প্রমাণে অসীম সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বে চলে আসেন ।
১৯৬৫ সাল ।দুইজন মার্কিন পদার্থবিদ আর্নো পেনজিয়াস ও রবার্ট উইলসন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বেল ল্যাবরেটরি গবেষণা করছিলেন ।তাঁদের কাজ ছিলো কক্ষপথে ঘুর্নয়মান স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুবই সংবেদনশীল ক্ষুদ্র তরঙ্গ শনাক্তকরন যন্ত্রের নকশা করা ।তারা এই ধরনের যন্ত্র তৈরি করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই এক ধরনের মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ আবিষ্কার করে ফেলেন ।সমসময়ে এই ধরনের তরঙ্গ নিয়ে কাজ করছিলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বব ডিক ও জেম পেবলস;তারা ফ্রিদম্যানের ছাত্র গ্যামোর একটি প্রস্তাবনা নিয়ে গবেষণা করছিলেন,প্রস্তাবনাটি হলো,এই মহাবিশ্ব অতি আদিতে অত্যন্ত ঘন ও উত্তপ্ত থাকার কথা,ফলে এই উত্তপ্ত অবস্থায় অবশ্যই সাদা রশ্মি বিকিরণের কথা ।তাহলে সূত্রমতে এই সাদা বিকিরিত রশ্মি এখনো পৃথিবীতে বর্তমান থাকার কথা কেননা আদিম মহাবিশ্বের অতি দুরবর্তী অংশের আলো এখন পৃথিবীতে পৌঁছেছে মাত্র ।আর এই রশ্মি খোঁজার জন্য মাঠে নেমেছিলো বব এন্ড জিম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বব আর ডিকের আগেই এই রশ্মি আবিষ্কার করে ফেললো আর্নো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইলসন ।এবং তারা এই কারণে ১৯৭৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান ।
ফ্রিদম্যান যে অনুমান করেছিলেন তার সমাধান মোটামুটি তিন ভাবে করা যেতে পারেঃ
প্রথমতঃ এই মহাবিশ্ব এতোটাই ধীরভাবে প্রসারিত হচ্ছে যা মহাকর্ষের টানে একদিন থেমে যাবে এবং মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে শুরু করবে ।
দ্বিতীয়তঃ এই মহাবিশ্ব এতই দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এই প্রসারণকে কখনো থামাতে পারবে না ।
তৃতীয়তঃ এই মহাবিশ্ব নিজেকে চুপসে যাওয়া প্রতিরোধ করতে প্রসারিত হচ্ছে এবং এই প্রসারন বেগ সর্বদা কমছে কিন্তু এই প্রসারন বেগ কখনো শুন্য হবে না ।এখানে প্রতিটি অনুমানেই গ্যালাক্সি গুলোর বিচ্ছেদ শুরু হয়েছে শুন্য দূরত্ব থেকে ।
ফ্রিদম্যানের মডেলের একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে,এই মহাবিশ্বের অবস্থান কোন সসীম অবস্থানে নয়,এমনকি এই অবস্থানের কোন সীমারেখাও নেই ।এখানে মহাকর্ষ এতটাই শক্তিশালী যে মহাবিশ্ব নিজের স্থানের উপর গোলাকৃতি ধারণ করে;যেমন এই পৃথিবীতে কেও এক দিকে চলা শুরু করলে সম্পূর্ণ পৃথিবী ঘুরে সে নিজের স্থানে এসে পৌঁছাবে এই একই বিষয় মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে ঘটবে ।শুনতে রূপকথার গল্প মনে হলেও এমনটাই ধারণা করতেন ফ্রিদম্যান ।পৃথিবীর ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিলো ত্রিমাত্রিক কিন্তু এখানে বিষয়টা চতুর্মাত্রিক ।চতুর্থ মাত্রা হলো সময়ও সবিস্তারে সসীম ।এখানে সাধারণ আপেক্ষিকতা ও বলবিদ্যার অনিশ্চয়তার নীতি একীভূত করলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে ।কেও যদি মহাবিশ্বের এক বিন্দু থেকে ভ্রমণ করে সেই বিন্দুতে ফিরে আসতে চায় তাহলে তাকে আলোর বেগের চেয়ে বেশী বেগে ভ্রমণ করতে হবে কিন্তু সেটি অনুমোদিত নয় ।
আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে প্রসারন বন্ধ করে দিয়ে সংকুচিত হতে শুরু করবে না চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে ? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে মহাবিশ্বের বর্তমান প্রসারন হার,বর্তমানে এর গড় ঘনত্বের মানের উপর ।এই মহাবিশ্বের প্রসারণ হার যদি সংকট মানের চেয়ে বেশী হয় তাহলে তাহলে এই সম্প্রসারণ থামানোর জন্য মহাকর্ষীয় বল হবে খুবই সামান্য ।আর এই মহাবিশ্বের প্রসারণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে যার ফলে সুদুরবর্তী কোন এক সময়ে মহাকর্ষ বল সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং মহাবিশ্বের সংকোচন শুরু হবে ।অনুমান করা হয় বর্তমানে মহাবিশ্ব প্রতি ১০০ কোটি বছরে ৫ থেকে ১০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।এখানেই সব সমাধান নয় বর্তমানে আমাদের গ্যালাক্সি ও অনন্য সমস্ত গ্যালাক্সি দৃশ্যমান সব নক্ষত্রের ভর যোগ করি তাহলে তাহলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থামানোর জন্য যে সংকট মান দরকার তার ১০০ ভাগের এক ভাগেরও কম কিন্তু আমরা জানি ডার্ক ম্যাটার নামে যেসব বস্তু আছে তারা এই সংকট ভরের যোগান দিবে। (ডার্ক ম্যাটার হলো সেই বস্তু যাদের দেখা যায় কারণ আলো ঐ গ্রহ থেকে বাইরে আসতে পারে না কিন্তু তারা আছে এবং তাঁদের ভরও আছে ) ।বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন আমাদের মহাবিশ্বের মোট ভরের ৮৪ শতাংশ ভর হচ্ছে ডার্ক ম্যাটারের বা কৃষ্ণ বস্তুর ।
অবিশ্বাসীরা কি চিন্তা করে দেখে না যে,একসময় নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল,অতঃপর আমি তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম এবং জীবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম? তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আল-আম্বিয়া;৩০)
28-02-2019
Naushed Palace, Islamic University.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot