বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম,স্বাধীন রাষ্ট্র। তবে বিশ্বের কোন রাষ্ট্রেরই জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি মেলেনা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেরও সকল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি মেলেনি।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৫০ টি রাষ্ট্র।[1] (সরকারী হিসাবমতে)
তার মানে অধিকাংশ রাষ্ট্র দিয়েছে। আর যেসব রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেইনি তাদের সাথে বাংলাদেশের তেমন কোন বাণিজ্যিক চুক্তি বা বিশেষায়িত সম্পর্ক নেই। এজন্য তাদের স্বীকৃতি প্রয়োজন পরেনি বা দেওয়া হয়ে উঠেনি। আবার কিছু রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো রয়েছে কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে উঠেনি।
আমি এমন কিছু পরিচিত রাষ্ট্রের তালিকা তুলে ধরবো যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেইনি। সম্পূর্ণ তালিকা দেখুন এই লিঙ্কে
১/ ইসরায়েলঃ[2]
আসলে বাংলাদেশকে ইসরাইল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম ভাগেই স্বীকৃতি দিয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ ইসরাইলের স্বীকৃতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখান করে। কেননা বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে একমাত্র বৈধ রাষ্ট্র মনে করে থাকে। বাংলাদেশের সাথে ইসরাইলের কোনরকম বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি বাংলাদেশ ইসরায়েলের উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমনকি সালেহ নামক এক বাংলাদেশী ব্যক্তি ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা করলে ইসরায়েল সরকার তাকে ৭ বছরের জেল দিয়েছিলেন।
চিত্রঃ বাংলাদেশের পাসপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ রয়েছে যে ইসরায়েল ব্যতীত।
২/ উত্তর কোরিয়াঃ
হ্যা উত্তর কোরিয়ার বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের তালিকায় নেই। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সাথে বর্তমানে বাংলাদেশের সুন্দর ও স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী রাষ্ট্রও দূতও রয়েছে। আর চীনে অবস্থিত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত উত্তর কোরিয়ার সাথে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো দেখে থাকেন।
৩/ থাইল্যান্ডঃ
থাইল্যান্ডও ১৫০ টি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী দেশের মধ্যে নেই। তবুও থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। উভয় দেশে উভয়ের দূতাবাস রয়েছে। শিক্ষা ও বানিজ্যে উভয় দেশ চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।
৪/ মালদ্বীপঃ
মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের স্বীকৃতিকারী দেশের তালিকায় নেই। তবে এদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। অফিসিয়াল হিসাবমতে ৮০ হাজার বাংলাদেশী মালদ্বীপে প্রবাসী হিসাবে রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
৫/ মায়ানমারঃ
এই দেশটিও বাংলাদেশের স্বীকৃতি দানকারী ১৫০ দেশের তালিকায় নেই। কিন্তু উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সুন্দর ছিলো, কিন্তু ২০১৬ সালে বাংলাদেশী নৌ সেনা হত্যা নিয়ে সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হয় এবং বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উভয় দেশের উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা অবনতি হয়েছে।
চিত্রঃ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগণ
৬/ পর্তুগালঃ
ফুটবলে জনপ্রিয় রোলান্ডোর দেশ পর্তুগাল। এই দেশটি বাংলাদেশী সমর্থন তালিকায় নেই। তবে উভয় দেশ উভয় দেশের শুভাকাঙ্ক্ষী, একে অপরকে সাহায্য করার চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ হাজার প্রবাসী পর্তুগালে কাজ করছেন।
৭,৮/ বাহামা ও বেলিজঃ
বাহামা ও বেলিজ উত্তর আমেরিকার দুইটি রাষ্ট্র। এরাও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেইনি বা স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে উঠেনি। এই দুই দেশের সাথে বাংলাদেশের নেই কোন বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক চুক্তি।
** এছাড়াও আরো কিছু রাষ্ট্র রয়েছে সেইসব রাষ্ট্র নেই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকরণের তালিকায়
বাংলাদেশকে সর্বশেষ বা সদ্য স্বীকৃতি দিয়েছে এমন রাষ্ট্রঃ
বাংলাদেশকে সর্বশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে চীন ( সেটাও ১৯৭৫ সালের ৩১ অগাস্ট) । আসলে চীন, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলো তাই এরা শেষের দিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবং মুসলিম দেশসমুহ অখণ্ড পাকিস্তান নীতি সমর্থন করতো তাই বাংলাদেশের স্বীকৃতি শেষের দিকে দিয়েছিলো।
সাল অনুসারে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি তালিকা দেখুনঃ
১৯৭১ সাল- ২ টি ( ভুটান, ভারত )
১৯৭২ সাল- ৮৮+ টি ( রাশিয়া, জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইরাক )
১৯৭৩ সাল- ১৮+ টি (আফগানিস্তান, মিসর, সিরিয়া, কুয়েত, লেবানন )
১৯৭৪ সাল- ৭+ টি ( ইরান, পাকিস্তান, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, কাতার )
১৯৭৫ সাল- ৪ টি ( সুদান, সৌদি আরব, ওমান, চীন)
ফুটনোটগুলি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন