স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুস সামাদ - সুজানগরের কৃতী সন্তান - Prodipto Delwar

Unordered List

ads

Hot

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুস সামাদ - সুজানগরের কৃতী সন্তান

আব্দুস সামাদ (১৯৩৬-১৯৯৯) মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অন্যতম সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন । তিনি মুজিবনগরে সরকারের প্রথম প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন । ১৯৭১ সালে তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক ছিলেন ।


জন্ম ও বাল্যকালঃ

মুক্তিযুদ্ধের মহান অবদানকারী এই ব্যক্তি ১৯৩৬ সালে পাবনা শহরের পৈলানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার রাইপুর গ্রামে তাঁর পৈতৃক নিবাস। তাঁর পিতার নাম আবদুল জব্বার আহাম্মদ । তিনি পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মাতা সেলিনা খাতুন ছিলেন গৃহিণী । চার ভাইয়ের মধ্যে আবদুস সামাদ, সিএসপি ছিলো কনিষ্ঠ। বড় তিন ভাই যথাক্রমে আবদুর রহিম (১৯২৬-১৯৯৯), ইপিসিএস ও ক্যাপ্টেন আবদুল মান্নান (১৯২৯-১৯৯৫) সেনা কর্মকর্তা এবং আবদুস সালাম (১৯৩৪-১৯৯৭) সিএসপি অফিসার ছিলেন। তাঁরা চার ভাই-ই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো ।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী উল্লসিত তরুণ 


শিক্ষাজীবনঃ

আবদুস সামাদ ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাটিক পাস করেন। ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং ফজলে হোসেন আবেদ তাঁর সহপাঠী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনঃ

১৯৫৯ সালে আবদুস সামাদ পাকিস্তান সেন্ট্রাল সার্ভিস (সিএসপি) এ যোগ দেন এবং গ্রেডেশনে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। কর্মজীবনে আবদুস সামাদ ১৯৬৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসডিও এবং ১৯৬৮ সালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন ।

আব্দুস সামাদ সম্পর্কে বিশিষ্ট লেখকের নিবন্ধঃ

মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম-কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান "সা’দত হুসাইন" তাঁর এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, “জুলাই মাসে সিলেটের জেলা প্রশাসক জনাব আবদুস সামাদ মুজিবনগর এসে পৌঁছলেন। ফলে তিনি হলেন মুজিবনগর সরকারের সর্বজ্যেষ্ঠ সিএসপি (সেন্ট্রাল সার্ভিস অফ পাকিস্থান) জেলা প্রশাসক। তিনি ক্লান্ত,অবসান্ত ও ভঙ্গুর চেহারা নিয়ে মুজিব নগরে উপস্থিত হলেন দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিনের অভুক্ত। আমাদের মেসেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হলো।
কয়েকদিনের মধ্যেই জনাব সামাদকে প্রতিরক্ষা সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হলো। তাঁর প্রকৃত কাজ কি ছিল সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি নিরবে কাজ করে যেতেন। আমার ধারণা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই তাঁর কাজ সম্পন্ন করেছেন। আমি জীবনে যে ক’জন সুউচ্চ পর্যায়ের মেধাবী ব্যক্তিকে দেখেছি জনাব সামাদ নিঃসন্দেহে তাঁদের অন্যতম। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস কিংবা দর্শন বিষয়ে তাঁর জ্ঞান এবং মানসিক সপ্রতিভতা যে কোনো লোককে মুগ্ধ করবে। তাঁর চালচলন ছিল অতি সাধারণ, মেজাজ ছিল ঠাণ্ডা, ব্যবহার ছিল সুমার্জিত ও পরিশীলিত। আমি জনাব সামাদকে কোনোদিন রাগতে দেখি নি, উত্তেজিত হতে দেখি নি, ঘাবড়ে যেতে দেখি নি, হতাশ বা উৎফুল্ল হতেও দেখি নি।…তিনি আমাদের সবার কথা শুনতেন, মূল্যায়ন করতেন এবং এবং যুক্তিতর্ক ও বিশ্লেষণ দিয়ে তাঁর বক্তব্য ধীরে সুস্থে সকলের বোধগম্য করে উপস্থাপন করতেন। যা আমরা সবাই উপভোগ করতাম ও প্রায়শই গ্রহণ করতাম।” (১)


স্বাধীনতাযুদ্ধে দায়িত্ব পালনঃ

১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট তিনি মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী মন্ত্রণালয়ের প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্ব গ্রহন করলেও প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্ব ছাড়াও তিনি কখনও কখনও অন্য দায়িত্বও পালন করতেন। উল্লেখ্য


স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার সম্বন্ধীয় নীতি নির্দ্ধারণী সভায় প্রতিরক্ষা সচিব জনাব আবদুস সামাদকে একই সাথে প্রেস, তথ্য, বেতার ও চলচ্চিত্রেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন।” (২)
এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের খোঁজ নিতেন। স্বাধীনতার পর তিনি নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ট্যারিফ কমিশন ও বিএডিসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

পারিবারিক জীবনঃ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেকশন অফিসার থাকাকালে আবদুস সামাদ প্রফেসর সুলতান আহমেদ চৌধুরীর কন্যা রিজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলে- জয় সামাদ ও এক মেয়ে- শম্পা সামাদ।

মৃত্যুঃ


১৯৯৯ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমিন।

তথ্যসূত্রঃ

১। মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা - কাবেদুল ইসলাম (পৃষ্ঠা :৬১-৬২) ।
২। মুজিবনগর সরকারের অফিসার রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর একটি নিবন্ধ - তাং (৩ সেপ্টেম্বর '৭১)
৩। পাকিস্তানস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক কাউন্সিলর প্রেস মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের প্রেরিত তথ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot