ব্রিটিশ বিরোধী নেতা মাওলানা রইচ উদ্দিন - সুজানগর উপজেলার গর্ব - Prodipto Delwar

Unordered List

ads

Hot

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ব্রিটিশ বিরোধী নেতা মাওলানা রইচ উদ্দিন - সুজানগর উপজেলার গর্ব

আজকে গল্প বলবো সুজানগরের কৃতী সন্তান,সুজানগর উপজেলার বিখ্যাত ব্যাক্তি মাওলানা রইচ উদ্দিনকে নিয়ে ।

মাওলানা রইচ উদ্দিন   ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় বীর সৈনিক, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক সদস্য (১৯৫৪-৫৮) ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা রইচ উদ্দিন (১৮৯৬-১৯৬৫)-এর কথা।
বাল্যকালঃ
ব্রিটিশ-বিরোধী অকুতোভয় বীর সৈনিক মাওলানা রইচ উদ্দিন ১৮৯৬ সালে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের অন্তর্গত পুকুরনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রমজান আলী তাঁর পিতার নাম ।
মাওলানা রইচ উদ্দিন স্থানীয় শ্যামগঞ্জ মানিককুণ্ডু  বিদ্যাপীঠে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সাগরকান্দি জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত জুনিয়র স্কুলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর মুর্শিদাবাদ নবাব হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
শিক্ষাজীবনঃ
প্রাথ্যমিক শিক্ষা পাঠ চুকিয়ে মুর্শিদাবাদ স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।এরপর  রাজশাহী কলেজ থেকে তিনি ১৯১৮ ও ১৯২০ সালে যথাক্রমে প্রথম বিভাগে আইএ ও Distincation সহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও আরবি সাহিত্যে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য, ১৯২০ সালে রাজশাহী কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা রইচ উদ্দিনের মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ একটি সার্টিফিকেট প্রদান করেন। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিনা বেতনে অধ্যয়ন করার সুযোগ লাভ করেন। সুজানগর উপজেলায় মাওলানা রইচ উদ্দিনই প্রথম এমএ পাস করেন।
রাজনৈতিক জীবনঃ
সমস্ত জীবন সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করে যাওয়া  নেতা মাওলানা রইচ উদ্দিন শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে গান্ধিজির নেতৃত্বে কলকাতায় কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন এবং মওলানা শওকত আলী ও মওলানা মোহাম্মদ আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের রাজনৈতিক সহপাঠী হিসেবে কাজ করেন। তৎকালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে পাবনাসহ সমগ্র উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করেন এবং নেতৃত্ব দেন। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতাস্থ পাবনা সমিতির ঊর্ধ্বতন সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাগরকান্দির জমিদারদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৩০ সালে তিনি তালিমনগরে একটি জুনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছরেই তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগের মনোনয়ন প্রার্থী হন। কিন্তু মনোনয়ন পান দেওয়ান লুৎফর রহমান (ভাষাসৈনিক)। তিনি দেওয়ান লুৎফর রহমানের পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করেন। নির্বাচনে লুৎফর রহমান বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। ১৯৪৮-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলার রাজনীতিতে মাওলানা রইচঃ
১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ঐতিহাসিক ‘যুক্তফ্রন্ট’।
যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন প্রকাশ পেলে দেখা গেল, সৈয়দ ফজলে হোসেন আবদুর রব বগামিয়া মনোনয়ন পেয়েছেন সুজানগর ও সাঁথিয়ার অংশ থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে। আর মাওলানা রইচ উদ্দিন মনোনয়ন প্রার্থী থাকা সত্বেও বাদ পড়েছেন। মাওলানা রইচ উদ্দিন ছুটে গেলেন পাবনায়, আবদুর রব বগামিয়ার কাছে। বগামিয়াকে বুঝিয়ে নিয়ে গেলেন ঢাকায় এবং মনোনয়ন পরিবর্তন করে প্রার্থী হয়ে এলেন মাওলানা রইচ উদ্দিন। উল্লেখ্য যে, আবদুর রব বগামিয়া মাওলানা রইচ উদ্দিনকে খুবই সম্মান করতেন। তাই তিনি নিজে প্রার্থী না হয়ে মাওলানা রইচ উদ্দিনকে মনোনয়ন পাইয়ে দিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের নজির খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। নির্বাচনে মাওলানা রইচ উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা রইচ উদ্দিনঃ
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে এদেশের প্রখ্যাত ওলিয়ে কামেল, পাবনার কুতুব হযরত শাহ মাহতাব উদ্দিন (রহঃ) নিজে ছায়ার মতো মাওলানা রইচ উদ্দিনকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। জমিদারদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মাওলানা রইচ উদ্দিন-ই সাগরকান্দি এলাকায় সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে গরু কোরবানির প্রচলন করেন। সে সময় গরু কোরবানি নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি কেউ যদি গরুর মাংস খেত এবং সেটা যদি জমিদার জানতে পারত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হতো। মুসলমানরা যাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অর্থ সাহায্য করেছেন এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার অনেক গরিব মেধাবী ছাত্রদের তিনি আর্থিক সহযাগিতা ছাড়াও বইপত্র ক্রয় করে দিতেন। রইচ উদ্দিন মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আমৃত্যু আন্দোলন করে গেছেন।
রইচ উদ্দিনের পারদর্শিতাঃ
মাওলানা রইচ উদ্দিন ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী ও ইসলামের আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর লেখা কোরআনের বাণী, মরুবীণা, সিন্ধু ও বিন্দু, মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ বিলাপ- তৎকালীন সমাজের দুরবস্থা ও প্রতিকার প্রভৃতি তাঁর পাণ্ডিত্যের সাক্ষ্য বহন করে। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি এবং সকল ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মিশুক ও সদালাপী। সাধারণ পোশাক পরিধান করতেন তিনি।
মৃত্যুঃ
পাবনা ও সুজানগরের গর্ব এই মহান সাধক ১৯৬৫ সালের ২০ ডিসেম্বর নিজ বাসগৃহে মৃত্যুবরণ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot