এশিয়া মহাদেশে মুসলমানদের উপর বৃহত্তম কিছু গণহত্যা ও নির্যাতন - Prodipto Delwar

Unordered List

ads

Hot

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

এশিয়া মহাদেশে মুসলমানদের উপর বৃহত্তম কিছু গণহত্যা ও নির্যাতন

দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছে। আর এভাবেই ইসলামের প্রসার ও মুসলমানদের বিস্তার ঘটেছে। আমি প্রাচীনকাল বাদ দিয়ে শুধু সাম্প্রতিককালে তাও আবার শুধুমাত্র এশিয়া মহাদেশের কিছু মুসলমানদের গণহত্যার চিত্র তুলে ধরবো।


১। চীন দ্বারা মুসলিম গণহত্যাঃ
১৮৬০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত চিনা মুসলিমরা কিং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিক বিদ্রোহ করে যেটা দুনগান বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহে তারা ব্যর্থ হয় এবং তাদের ১.৩ কোটি জনগণের মধ্যে ৭০ লক্ষ মানুষ গৃহহারা হয়েছিলো। এবং চীনা সাম্রাজ্যের অত্যাচারের ফলে ১.২ কোটি হুই জনগণ ও চীনা জনগণ মারা গিয়েছিলো। "মুসলিমদের ধুয়ে ফেলা" নাম দিয়ে এই মিশন পরিচালিত হয়েছিলো।

চিত্রঃ দুনগান বিদ্রোহে সম্পর্কে শিল্পীর একটি কল্পনা
১৭৬৫ সালে কিং রাজবংশের রাজা মাঞ্চুস এর পুত্র ও তার কর্মচারীরা উইঘুরের মুসলিমদের ধর্ষণ করতো প্রতিনিয়ত। কেননা তাদের যুক্তি ছিলো তাদের নারী মাংশ খেতে পছন্দ। এরপর উইঘুরের জনগণ প্রতিবাদি হয়ে উঠলে মাঞ্চু সম্রাটের আদেশে উইঘুরের পুরুষদের গণহত্যা করা হয় এবং তার সেনাবাহিনী অবাধে উইঘুরের নারীদের ঘর্ষণ করতে থাকে। এবং সমস্ত মুসলিম নারী ও শিশুদের দাস ও যৌনকর্মী বানিয়েছিলো। গণহত্যার পরিমাণ এতো পরিমাণ ছিলো যে, মাঞ্চু সরকার কর্তৃক ১ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল।


২। ভারত দ্বারা মুসলিম হত্যাঃ
ভারতে ১৯৫৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ৬৯৩৩ টি সংঘর্ষে ১০,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৬০০০ হয়ে যায়। আর যদি ১৯০০ সালের পর থেকে হিসাব করা যায় তাহলে মুসলিম হত্যার সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায় বলে দাবী করছে মুসলমানগণ। বড় বড় কিছু হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে।



৩। রাশিয়া-আর্মেনিয়া দ্বারা গণহত্যাঃ
রাশিয়ায় কাজান বিজয়ের পরে ১৫৫২ সালে বহু ইসলামিক স্কলারকে নির্যাতন করা হয়েছিলো।
এরপর রাশিয়ান আলেকজান্ডার সুভোরভ ১৭৯১ তৎকালীন একটি হামলার পরে ঘরে ঘরে, ঘরে ঘরে চাপ দেওয়া হয়েছিল এবং শহরের প্রায় প্রতিটি মুসলিম পুরুষ, মহিলা এবং শিশু মারা গিয়েছিল তিন দিনের অনিয়ন্ত্রিত গণহত্যায়, ৪০,০০০ তুর্কি মারা গিয়েছিল, কয়েকশকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
১৯১৯ সালে রাশিয়া এবং আর্মেনীয়া কতৃক বহু মুসলমানকে তুর্কি ও কুর্দি মুসলমানদের হত্যা করেছিল। আজমির, মনিসায় ব্যপক গনহত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতার স্বীকার হয়েছিলো মুসলিমরা ইতিহাস সাক্ষী ঐ সময় প্রায় ২৫০ গ্রাম চালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

চিত্রঃ কাজান যুদ্ধের সময় মুসলিমরা মসজিদ আক্রমণ ঠেকাচ্ছে।


৪। জাপান দ্বারা গণহত্যাঃ

আরাকানে অত্যাচার
জাপান সাম্রাজ্য বাহিনী ১৯৪২ সালে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করে এবং কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ব্রিটিশ ভারতের বাংলায় বহিষ্কার করে। এই সময়কালে, প্রায় ২,২০,০০০ রোহিঙ্গা সহিংসতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ ভারতের সাথে মিশে যায়। এরপর ৪০,০০০ রোহিঙ্গা শেষ পর্যন্ত বার্মিজ ও জাপানি বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার পরে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়।
চায়নাতে অত্যাচার
ব্রিটিশ বার্মার একটি চীনা মুসলিম শহর প্যাংলং জাপানি হানাদার বাহিনী আক্রমণে পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছিল। ২০০ এর বেশী পরিবার পালিয়ে গেছিলো শহর ছেড়ে।

চিত্রঃনানজিংয়ে জাপানিরা ধর্ষণের পর হত্যার একটি দৃশ্য
দ্বিতীয় চীন-জাপানি যুদ্ধের সময় নানজিংয়ে জাপানিরা "হত্যার নীতি" হিসাবে অভিহিত হয়ে অনুসরণ করেছিল এবং অনেক মসজিদ ধ্বংস করেছিল। ওয়ান লেয়ের মতে, জাপানিরা ১৯৪২ সালের এপ্রিলের মধ্যে ২২০ টি মসজিদ ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং অগণিত হুই মানুষকে হত্যা করেছিল।" নানজিংয়ের নানকিং মসজিদের ধর্ষণের পরে মৃতদেহ ভরা দেখা গেছে। তারা আরেকটি নীতি অনুসরণ করেছিলো ইচ্ছাকৃত অপমানের নীতি। তারা স্থানীয় নারীদের তাদের যৌনদাসী বানিয়েছিলো।


৫। মায়ানমার মুসলমান নিধনঃ
মিয়ানমারে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছে। মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘু বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জনগণ প্রথমদিকে, ধর্মীয় কারণে মুসলমানদের উপর বৌদ্ধ নির্যাতন শুরু হয়েছিল এবং এটি ১৫৫০-১৫১৫ পূর্ব খ্রিস্টাব্দের রাজা বায়েননাংয়ের রাজত্বকালে ধর্মের নামে পশু নিধনকে ও ইসলাম ধর্মের কুরবানিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ১৮ শতকে হালাল খাবারও রাজা আলাউংপায়ার দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

চিত্রঃ বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা, অক্টোবর 2017,
এরপর ১৯৬২ সালে যখন জেনারেল নে উইন জাতীয়তাবাদের ক্ষমতায় এলেন, মুসলমানদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছিলো। মুসলমানদের সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং দ্রুত প্রান্তিককরণ করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে আরাকানের কিং ড্রাগন অভিযানের ফলে ১৯৯৮ সালে ২ লক্ষ এবং ১৯৯১ সালে ২,০০,০০০ ২ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
২০১২ সালে একটি বহুল প্রচারিত বার্মিজ সংঘাত ছিল রাখাইন রাজ্য সংঘর্ষের একটি সিরিজ যা মূলত উত্তর রাখাইন রাজ্যে জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণকে জড়িত করেছিল। এই দাঙ্গার ফলে আনুমানিক ৯০,০০০ মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
এবং সবশেষে ২০১৬ সালের দিকে প্রচুর পরিমাণে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।


৬। বসনিয়ায় গণহত্যাঃ
বসনিয়ায় ১৯৪৫ সালে ঐ দেশের কমিউনিস্ট সয়ারকার কতৃক বসনিয়ায় প্রায় ১ লক্ষ সাধারণ মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছিলো, যা ইতিহাসের বৃহত্তম গনহত্যা নামে পরিচিত।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot